মাসুদুর রহমান জামালপুর প্রতিনিধি :
৪৪তম বিসিএস (প্রশাসন) এ দেশে প্রথম স্হান অর্জন করেছেন জামালপুরে কৃষকের ছেলে ফরহাদ হোসেন। তার এ সাফল্যে বৃহস্পতিবার দুপুরেও জামালপুর পুলিশ সুপার সৈয়দ রফিকুল ইসলাম পিপিএমের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে ফুলের শুভেচ্ছা। এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসক হাসিনা বেগমের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছে ফুলেল শুভেচ্ছা।
ফরহাদ হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনায় ছিলেন বেশ মনোযোগী। ফসলের মাঠেও ছিলেন কৃষক বাবার সহযোগী। এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার আগ পর্যন্ত বাবার সাথে মাঠে কৃষিকাজ করতেন । ফরহাদ হোসেনের শৈশব কেটেছে জামালপুর সদর উপজেলার জাফরশাহী গ্রামে ।সাধারণভাবেই কেটেছে মো: ফরহাদ হোসেনের জীবন। এ ছাড়াও ছোট থেকেই খেলাধুলার প্রতি ছিল তার ঝোক । নিজের প্রবল আত্মবিশ্বাস আর অদম্য চেষ্টায় এগিয়ে গেছেন নিজের গন্তব্যে। হয়ে গেলেন ৪৪ তম বিসিএস ক্যাডার (প্রশাসন )। তিনি জামালপুর জেলার জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফর শাহী গ্রামের তোফাজ্জল এর সন্তান। ১৯৯৬ সালের ১২ জানুয়ারী তিনি জন্ম গ্রহণ করে ফরহাদ হোসেন। বিসিএস এর ফলাফল প্রকাশ এর পর থেকেই স্থানীয় এলাকাবাসী, শিক্ষার্থী ও পার্শবর্তী এলাকার লোকজন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনেরা ব্যক্তিরা প্রতিনিয়ত তার বাড়ীতে ভীড় জমাচ্ছে এবং ফুলেল শুভেচছাও জানাচ্ছেন।দেশে প্রথম স্থান হওয়ায় এটা জামালপুর সদর ও জেলাবাসীর জন্য গৌরবের ও আনন্দের সংবাদ বলে বুধবার (২ জুলাই) বিকাল সাড়ে চারটায় জানিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিন্নাত শহীদ পিংকি।
এলাকা ঘুড়ে জানা যায়, জামালপুর জেলার জামালপুর সদর উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের জাফরশাহী গ্রামের তোফাজ্জল কৃষি কাজ করে সংসার চালাতেন। তার ২ ছেলে ও ১ মেয়ের মধ্যে মো: ফরহাদ হোসেন দ্বিতীয়। বড় ছেলে তোফাজ্জল ঢাকায় একটি পোষাক কারখানায় কর্মরত রয়েছেন। তার ছোট মেয়ে রুকসানা পারভীনকে বিয়ে দিয়েছেন। তার স্বপ্ন ছিল তার ২য় ছেলে ফরহাদ হোসেনকে বিসিএসে পড়াশোনা করাবে। ফরহাদ হোসেন ৯১ নং জাফরশাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শুরু এবং কৈডোলা জাফরশাহী উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াশোনা অবস্থায় বাবার সাথে কৃষিকাজ করে পরিবারকে সহযোগিতা করতেন। বাবার স্বপ্ন পুরণে ২০১৪ সালে ময়মনসিংহ কেবি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ভর্তি হয় ফরহাদ। পাশাপাশি করতে থাকেন টিউশনি। সেখান থেকে পড়াশোনা শেষ করে বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে থাকেন ফরহাদ। ৪১ ও ৪৩ বিসিএস এ ব্যর্থ হোন ফরহাদ হোসেন ৷ এর পর ২০২৩ সালে তিনি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে অফিসার হিসেবে যোগদান করে শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলায় কর্মরত রয়েছেন । চাকরির পাশাপাশি তার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য তিনি ৪৪ তম বিসিএসে আবারো চেষ্টা করে যান । এদিকে ২০২৫ সালের ২০২৫ সালের ৪ এপ্রিল ময়মনসিংহ শহরের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকার মোহা: নজমুল ইসলাম এর মেয়ে নুসরাত-ই-জান্নাত নীতিকে বিবাহ করেন ফরহাদ হোসেন।
স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানান, জাফরশাহী এলাকায় এই প্রথম বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন ফরহাদ। তার আগে এতদুর পর্যন্ত কেউ যায়নি। তার এ সাফল্যে এলাকাবাসীরা ব্যাপক খুশি ও আনন্দিত হয়েছে।অন্যদিকে বাবা তোফাজ্জল ও মা হামিদা বেগম জানান, কষ্টকরে তাদের সন্তানদের পড়াশোনা করিয়েছেন । সন্তানের এ সাফল্যে খুশি তারা৷ তবে সন্তানের জন্য দেশ বাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।
তবে ফরহাদ এর স্ত্রী নুসরাত-ই-জান্নাত নীতি জানান, কলেজ থেকেই আমাদের পরিচয়। আমি আমার স্বামীর পাশে অতীত থেকেই ছিলাম। সব সময় তার সাহস যুগিয়েছি। প্রথমে সবাই সফলতা পায় না। ৪১ ও ৪৩ বিসিএসে ও চেষ্টায় সফলতা না পাওয়ায় খুব চিন্তায় পড়েছিল। তিনি আরো জানান, আমি সব সময় তাকে শুধু একটা কথাই বলতাম চেষ্টা চালিয়ে যাও,ভেংগে পড়ো না। আমার স্বামীর ফলাফলে আমরা খুবই খুশি৷ সবাই দোয়া করবেন।
কথা হলে ফরহাদ বলেন, আমার মা-বাবা খুবই সাধারণ মানুষ। আমার বাবা কৃষক। আমি গর্বের সাথে বলতে পারি আমি কৃষকের ছেলে। তিনি অনেক কষ্ট করে আমাদের তিন ভাইবোনকে পড়াশোনা করিয়েছেন। আমার বাবার ইচ্ছা ছিল বিসিএস শেষ করব৷ আমি তাদের স্বপ্ন পূরণ করতে পেরে আমি খুশি। তিনি আরো জানান, ৪২ ও ৪৩ বিসিএসে ব্যর্থ হলে আমার পরিবার ও স্ত্রীর অনুপ্রেরণা আমাকে সাহস যোগিয়েছে। সর্বোপরি মা, বাবা, স্ত্রী, ভাই, বোন সবার দোয়া তার চলার পথকে সহজ করেছে বলে জানান ফরহাদ। দেশ ও জনগনের সেবায় নিয়োজিত রাখতে চায় নিজেকে।
৯১ নং জাফরশাহী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জিন্নাতি ফাতেমা জানান, ৪৪ তম বিসিএসে বাংলাদেশে প্রথম স্থান অর্জন করেছে আমাদের বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ফরহাদ হোসেন। ছোট থেকেই ফরহাদ খুব মেধাবী ছিলেন। তার এ সাফল্যে আমরা গর্বিত। আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন ফরহাদের মতো বিসিএস ক্যাডার হতে পারে সেই দোয়া করি।
ফরহাদ হোসেনের ফলাফল জেলাবাসীর জন্য গৌরবের ও আনন্দের সংবাদ বলে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিন্নাত শহীদ পিংকি জানান, জেলা প্রশাসক এর নির্দেশে আমরা ফরহাদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করেছি। কৃষক পরিবার থেকে তিনি এসেছেন এবং ৪৪ তম বিসিএস ক্যাডার(প্রশাসন) এ প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। আগামীকাল বিকাল ৫ টায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে আমরা সংবর্ধনা দিব। তিনি আরো জানান, এ ছাড়াও উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৪৪ তম বিসিএস এ যারা সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছে আমরা সকলকে সংবর্ধনা দিয়ে আমরা তাদেরকে উৎসাহ প্রদান করব।