আবুল হাসনাত, চট্টগ্রাম
আর মাত্র কয়েক দিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের এই মহোৎসবকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে জমে উঠেছে কোরবানির পশুর হাট। গরু, ছাগলের পাশাপাশি এবার চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বিখ্যাত মইজ্জারটেক পশুর হাটে উঠেছে এমন এক পশু, যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে তুমুল কৌতূহল—সৌদি আরব থেকে আনা বিশাল আকৃতির উট।
চট্টগ্রামের এই ঐতিহ্যবাহী পশুর হাটে এ বছর দেখা মিলেছে সাতটি সৌদি উটের। উটগুলো আনা হয়েছে যশোরের সীমান্তবর্তী বেনাপোলের শার্শা উপজেলার পুটখালী গ্রামের খামার মালিক নাসির হোসেনের খামার থেকে। জানা গেছে, প্রায় এক বছর আগে সৌদি আরব থেকে উটগুলো আমদানি করা হয়। এরপর শুরু হয় দীর্ঘ পরিচর্যার পথচলা। নাসিরের খামারে দেশীয় পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে উটগুলোকে দিতে হয়েছে বিশেষ যত্ন, খাবার এবং নিয়মিত চিকিৎসা। এখন উটগুলো সুস্থ ও কোরবানির জন্য সম্পূর্ণ উপযোগী।
মইজ্জারটেক হাটে বর্তমানে তিনটি উট দৃশ্যমান থাকলেও নাসির হোসেন জানিয়েছেন, তিনি মোট সাতটি উট এনেছেন হাটে বিক্রির জন্য। প্রতিটি উটের দাম ধরা হয়েছে ৩২ থেকে ৩৫ লাখ টাকার মধ্যে, অর্থাৎ এক জোড়া উটের মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৭০ লাখ টাকা। এসব উটের উচ্চতা গড়ে ১২ থেকে ১৫ ফুট, যা সাধারণ মানুষের কাছে রীতিমতো বিস্ময়ের উদ্রেক করছে। এ পর্যন্ত একটি উট বিক্রিও হয়ে গেছে, যার দাম উঠেছে ৩২ লাখ টাকা।
উট দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন হাজারো মানুষ। কেউ এসেছেন পশু কিনতে, কেউ শুধুই কৌতূহল মেটাতে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর হাটে মানুষের ঢল নেমেছে। অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে এসেছেন, শিশুরা উট দেখার আনন্দে উৎফুল্ল। তবে দূরত্ব ও আবহাওয়ার কিছুটা প্রতিকূলতার কারণে শহরের কেন্দ্র থেকে অনেকে এখনো পৌঁছাতে পারেননি।
বাংলাদেশে কোরবানির ঈদ মানেই গরু বা ছাগলের প্রাধান্য। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিত্তবানদের মধ্যে একটি নতুন প্রবণতা দেখা যাচ্ছে—আলাদা কিছু করার চেষ্টায় তারা উটের দিকে ঝুঁকছেন। ইসলামে কোরবানির পশু হিসেবে উট গ্রহণযোগ্য এবং মর্যাদাপূর্ণ। একজন উটে সর্বোচ্চ সাতজন পর্যন্ত শরিক হতে পারেন, যা বড় পরিবার বা যৌথ কোরবানির জন্য একটি সুবিধাজনক বিকল্প। মধ্যপ্রাচ্যে উট কোরবানি সাধারণ হলেও বাংলাদেশে তা এখনো সীমিত পর্যায়ে। তবে এবার মইজ্জারটেক হাটের উটগুলো যেন সেই ব্যবধান কিছুটা হলেও কমিয়ে দিচ্ছে।
খামার মালিক নাসির হোসেন বলেন,
“দেশে অনেকেই মনে করেন উট লালন-পালন করা কঠিন। কিন্তু নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক খাবার দিলে সেটা সম্ভব। আমার খামারের উটগুলো এখন দেশের সবচেয়ে বড় কোরবানির পশু হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে, এটা আমার জন্য বড় সাফল্য।”
তবে খরচের দিক থেকেও রয়েছে চ্যালেঞ্জ। প্রতিটি উট আমদানিসহ লালন-পালনে ব্যয় হয়েছে কয়েক লাখ টাকা করে। তবু তিনি আশা করেন, মানুষ উটের কোরবানি বিষয়ে আরও আগ্রহী হলে ভবিষ্যতে দেশেই বড় পরিসরে উট পালন সম্ভব হবে।
চট্টগ্রামের মইজ্জারটেক হাটে সৌদি উটের উপস্থিতি যেন এবারের কোরবানির ঈদের এক ভিন্ন মাত্রা এনে দিয়েছে। এটি যেমন অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য দেখাচ্ছে, তেমনি কোরবানির পশুর বিষয়ে মানুষের রুচি ও চাহিদারও পরিবর্তনকে ইঙ্গিত করছে। ত্যাগের এই উৎসবে যারা আলাদা কিছু করতে চান, তাদের জন্য হয়তো উট হয়ে উঠতে পারে বিশেষ একটি পশু — সৌন্দর্য, মর্যাদা ও ধর্মীয় তাৎপর্যের অনন্য এক প্রতীক হিসেবে।